মাধুরীলতা: এক ভিনদেশী রঙ্গনা
![]() |
মাধুরীলতা/মধুমঞ্জরী/মধুমালতী |
মধুমালতীকে মাধবীলতা বলে ভুল করেন না, এমন মানুষের সংখ্যাই বরংচ কম। শুরুর দিকে তো এই আমিও মাধবীলতাই ডাকতাম। পছন্দের ফুল, সে সূত্রেই খানিকটা জানবার প্রয়াস। জেনে বুঝলাম, এ ভারী অন্যায় করে ফেলেছি! নিজের পছন্দকেও ঠিক জানিনা! খানিকটা প্রায়শ্চিত্ত করবারই আকাঙ্ক্ষায় জানতে শুরু করলাম মালতীকে। মালতীর কিন্তু অন্য নামও আছে! তাতেও সে খানিকটা মাধুরী মিশিয়েই রেখেছে; নাম তার মধুমঞ্জুরী,কেউবা ডাকে মাধুরীলতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মুগ্ধ হয়েই অজানা মালতীকে স্বদেশী ভেবে মধুমঞ্জুরী নাম দিয়েছিলেন।
হিন্দিতে সে রঙ্গন-কা-বেল, লাল চামেলী নামে পরিচিত। মালতীর আদি বাস ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা,ইন্দোনেশিয়া,থাইল্যান্ডে। কেউ কেউ মনে করেন মালতী এসেছে মালয়েশিয়া থেকে। সেখান থেকে অভিযোজিত হয়ে বার্মায়(মায়ানমার)। বার্মার রেঙ্গুনের রেশ ধরেই ইংরেজিতে সে Rangoon Creeper বলে পরিচিত। গ্রীষ্ম-বর্ষায় মাধুরী ফোটে তার প্রাচুর্য নিয়ে। বছরের অন্যান্য সময়েও তার দেখা মেলে বলেই সে বারোমাসী।
কুঞ্জ তৈরীতে মালতীর জুড়ি নেই। কি অদ্ভুত সৌন্দর্য তার! লাল,সাদা আর গোলাপি রঙে সে যেন সাজিয়ে রাখে প্রকৃতিকে। সাদা থেকে ধীরে ধীরে রঙ বদলায়। শুধু রঙই নয়, মঞ্জুরী মন কাড়ে তার স্নিগ্ধ সুবাসেও। পাঁচ পাপড়ির গড়ন তার, ফলের নাম সামারা। লতানো মালতীকে দেখা যায় মূলত বাড়ির দেয়াল কিংবা ফটকজুড়ে, বেশ জাকিয়ে বসে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে সে বেড়ে ওঠে। ঘন সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় লাল-সাদা মঞ্জুরী মুগ্ধতা ছড়ায়। প্রস্ফুটন প্রাচুর্য, রঙের বৈচিত্র্য আর স্নিগ্ধ সুবাসে সে হয়ে উঠেছে মনমুগ্ধকর,ভুলিয়েছে কবি-মন, সমৃদ্ধ করেছে সাহিত্যকে। তাইতো মালতীর রঙে মনকে রাঙিয়ে নজরুলও গেয়ে উঠেছেন আপন মনে প্রেমের গান-
কেন মনো বনে মালতী বল্লরী দোলে,
জানিনা জানিনা জানিনা
কেন মুকুলিকা ফুটে ওঠে পল্লব তলে,
জানিনা জানিনা জানিনা ॥
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন